নির্জলা একাদশী
ত্রিবিক্রম মাস জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষীয়া “নির্জলা” একাদশী এবং ঐ দিন ভীম কর্তৃক এই নির্জলা একাদশী পালনে “পাণ্ডবা নির্জলা” একাদশী নামে ও প্রসিদ্ধ হয়েছে।
একাদশী মাহাত্ম্য উৎস: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
প্রকাশক- শ্রীভক্তস্বরুপ সন্নাসী মহারাজ
(সাথারণ সম্পাদক )
মায়াপুর শ্রীমায়াপুর, নদীয়া।
চর্তুথ সংস্করণ
নির্জলা একাদশী মাহাত্ম্য
- নির্জলা একাদশীতে কোন প্রকার আহার গ্রহন না থাকতে পারে তবে সকল পাপ বিমুক্ত হয়।
- মৃত্যুকালে বিষ্ণুদ্যুতগণ ব্রত পালনকারীকে সস্মানে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান, তাই যমদ্যুতগণ তার কাছে আসার সাহস পায় না
- যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাপূর্বক এই মাহাত্ম্য শ্রবণ করেন, পাঠ করেন তিনি বৈকুণ্ঠ- ধাম প্রাপ্ত হন।
- শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, এই নির্জলা একাদশী তিথিতে মানুষ যদি পুণ্য সলিলে স্নান, পবিত্র নৈষ্ঠিক ভক্তে দান, যাগ-যজ্ঞ, হোম ও অন্যান্য শুভকর্মাদি যা করুন না কেন তৎসমুদয় অক্ষয় হয়ে থাকে।
- নির্জলা ব্রত পলন করে জল দান, গো-দান করলে মানুষ সব রকম পাপ হতে মুক্ত হয়।
- নির্জলা একাদশী আত্নসংযমের এক বিশাল পরীক্ষা তাই শুধু মাত্র একদিনের জন্য সকল প্রকার খাবার ত্যাগ করা এমনকি অতিরিক্ত মাএায় জল পান করলেও মদ সদৃশ হিসেবে ধরা হয়। এইদিনে হরিনাম স্মরণ করে নিজের সর্বোচ্চ প্রদান করুন এবং সকল পাপ থেকে মুক্ত হোন।
নির্জলা একাদশী পালনের নিয়ম
নির্জলা একাদশী পারনের সময় পারনের সময়: বাংলাদেশের সময় সকাল ০৫:১১ মিনিট থেকে ০৮:০০ মধ্যে । এই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্যের গ্রহন করে একাদশী সম্পূন করতে হবে।
নির্জলা একাদশী ব্রত কথা
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ভীম-ব্যাস সংবাদে বর্ণিত আছে—- একদা মধ্যমপাণ্ডব ভীমসেন শ্রীব্যাস মহর্ষিকে প্রশ্ন করলেন, হে পূজনীয় পিতামহজী ! “আমার একটা নিবেদন শুনুন, আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির, মাতৃদেবী কুন্তীদেবী, দ্রৌপদী সুন্দরী ও অন্যান্য কনিষ্ঠ ভ্রাতৃগণেরা সকলেই একাদশীর দিন ব্রতোপবাস করে থাকেন ৷
আমাকে প্রতি মাসের কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষীয়া একাদশী পালনে অনুরোধ করে এবং শাস্ত্রসম্মত এই ব্রত পালনে ভগবানে ভক্তির উদয় হয়। কিন্তু আমার ভীষণ ক্ষুধা, কিছুতেই ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না—আমি উপবাসে সম্পূর্ণরূপে অসমর্থ।
আমি যথাশক্তি দান করতে পারি, কেশবপূজা করতে পারি কিন্তু উপবাস করার কথা শুনলে ভয়ে আমার শরীর কাঁপতে থাকে। উপবাস ছাড়া একাদশী ব্রতের ফল আর কি করলে পাওয়া যায় আপনি আমায় বলুন।” মহর্ষি শ্রীব্যাস তখন বললেন—হে ভীম! যদি তুমি ভগবদ্ধাম অতি প্রিয় বলে মনে কর—আর নরককে অত্যন্ত নিকৃষ্ট বলে মনে করে থাক, তা’হলে প্রতি মাসের উভয় পক্ষীয়া একাদশীতে উপবাস করতে হবে। তা’ শুনে ভীম বললেন, হে মহর্ষে! উপবাস করবার মত সামর্থ্য আমার নেই, কারণ আমার পেটের মধ্যে ‘বৃক’ নামক একপ্রকার অগ্নি থাকায়, লোকে আমাকে বৃকোদর বলে থাকে, তাই ক্ষুধা সহ্য হয় না। তবে আমি একটি মাত্র উপবাস করতে পারি আপনি কৃপাপূর্বক একটি ব্রতের ব্যবস্থা করে দিন। যা পালন করে আমার ইহ-পরলোকের প্রভুত মঙ্গল হতে পারে।
তখন শ্রীব্যাসদেব বললেন, বর্তমান যুগে ভাগবত ধর্ম যাজনের শক্তি সকলের নেই, এইজন্য অল্প ক্লেশে সরল উপায় মহাফল প্রাপ্তি দূর্লভ, তথাপিও সকল পুরাণের সারাংশ যিনি উভয়পক্ষীয়া একাদশী পালন করে অনাহারে থেকে শ্রীকৃষ্ণস্মরণ করে থাকেন তাঁর আর নরকে যেতে হয় না। শ্রীব্যাসদেবের উক্তি শুনে বলবান ভীম অশ্বত্থবৃক্ষের পাতার ন্যায় কাপতে লাগলেন।
হে পিতামহ ! একি ভয়ানক কথা শুনালেন? আমি কি করব? আমার উপায় কি হবে? তখন শ্রীব্যাসদেব বললেন, মিথুন বা বৃষ রাশিতে সূৰ্য্য অবস্থানকালে জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষে যে একাদশী উপস্থিত হয়, তাকে নির্জলা একাদশী বলা হয়। ঐ তিথিতে জল পর্যন্ত গ্রহণ না করে হরিস্মরণ করলে ব্রত সুষ্ঠুরূপে পালন করা হয়।
এক মাষা সুবর্ণ পরিমিত জলদ্বারা আচমন করতে হয়, অধিক জল গ্রহণে মদ্যপান সদৃশ হয়। সুতরাং কোন কিছুই ভক্ষণ করা চলবে না।
এইরূপে কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে ভগবদ- স্মরণপূর্বক নিরম্বু একাদশী ব্রতপালনে বিনাযত্নে বারোমাসের ফল পাওয়া যায়। শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী শ্রীবিষ্ণু আমায় বলেছিলেন, বৈদিক ও লৌকিক ধর্ম পরিত্যাগ করতে বাধ্য থাকিয়া, যদি আমার শরণাপন্ন হয়ে আমার এই পরমপ্রিয় ‘নির্জলা’ মানুষ একাদশীতে নিরাহারে থাকতে পারে তবে সকল পাপ বিমুক্ত হয়।
নানান দোষদুষ্ট এই কলিযুগ, বৈদিকধর্মাদি লুপ্ত প্রায়, হে ভীমসেন! তোমাকে এ-ছাড়া অধিক আর কি বলব? মৃত্যুকালে দণ্ডধারী যমদ্যুতগণ এই ব্রত পালনকারীর নিকটে আসার পরিবর্তে দিব্যবেশধারী—বিষ্ণুদ্যুতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান।