ভাদ্র শুক্লপক্ষীয়া পার্শ্ব একাদশীর মাহাত্ম্য
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে বর্ণিত আছে— একদা যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন—হে কৃষ্ণ! এই ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি? কি প্রকারে এই ব্রত পালন করতে হয়? এই ব্রত পালনের ফল কি?
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই ব্রত পুণ্যফল প্রদায়িনী, স্বর্গ ও মোক্ষদায়িনী—এর মাহাত্ম্য শ্রবণে সকল পাপ বিনষ্ট হয়। এই একাদশীকে পার্শ্বৈকাদশী বলা হয়। আবার এই একাদশীকে জয়ন্তী একাদশীও বলা হয় ৷
এই একাদশীতে শায়িত ভগবান —অনন্তশয্যায় পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। বাম অঙ্গ থেকে দক্ষিণ অঙ্গে শয়ন করেন, তাই এই একাদশীকে ‘পরিবর্তিনী’ একাদশীও বলা হয়। যুধিষ্ঠির মহারাজ বললেন, হে জনার্দন! এই সকল কথা শুনে আমার বড় সন্দেহ হয়, আপনি কিরূপে শয়ন করেন আবার কিরূপেই বা পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। চাতুর্মাস্য ব্রতকারীর কি বিধান, আপনার শয়নকালে লোকে তখন কি করে? আপনি বলি মহারাজকে কি জন্য বরুণপাশে বেঁধেছিলেন?
হে প্রভো! এই সকল বিষয় কৃপাপূর্বক আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাজন! ত্রেতাযুগে বলি নামে এক অসুরকুলজাত আমার ভক্ত ছিল, সে প্রতিদিন শ্রদ্ধাযুক্তভাবে বিভিন্ন মন্ত্র দ্বারা পূজা করতো। ব্রাহ্মণগণ পূজা ও যজ্ঞাদিতে সাহায্য করত। কিছুদিন পর দেবরাজ ইন্দ্রের প্রতি দ্বেষ করে দেবলোক জয় করে নিল। তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেববৃন্দ
স্বর্গরাজ্য হারা হয়ে আমার শরণাপন্ন হল। দেবমাতা অদিতির পয়ঃব্রত পালনে আমি তাঁর পুত্ররূপে দেবকার্য সাধনের জন্য বামনরূপ ধরে বালক ব্রহ্মচারী বেষে তৎক্ষণাৎ বলির নিকট ভিক্ষা চাইলাম। সে আমায় পূজা করে আমার অভিরুচি ভিক্ষা দিতে চাইল।
অগত্যা আমি তার নিকট ত্রিপাদ ভূমি যাচ্ঞা করলে সে আমায় দিতে সম্মত হলে আমি এক পদদ্বারা মর্ত্যভূমি, দ্বিতীয় পদদ্বারা উর্দ্ধলোকসমূহ আক্রমণ করি, তৃতীয়পদের জন্য স্থান চাইলে বলি তখন স্বীয়মস্তক প্রদান করেছিল।
তার নম্রতা ও শ্রদ্ধায় সন্তুষ্ট হয়ে আমি আশীর্বাদ করেছিলাম যে, হে বলি ! আমি সব সময় তোমার নিকট থাকব।
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর দিন আমার অর্থাৎ বামনদেবের শ্রীমূর্তি বলির আশ্রমে স্থাপিত হয়।
আর দ্বিতীয়মূর্তি ক্ষীরসাগরে অনন্তশয্যায় শায়িত অবস্থায় স্থাপিত হয়েছে, তা’হলে শয়ন থেকে উত্থান একাদশী এই চারমাসকাল চাতুর্মাস্য পালন করতে হয়। এই একাদশী ব্রত পালনে ভববন্ধন ক্ষয় ও আমাতে ভক্তির উদয় হয়, অন্তে আমার ধাম প্রাপ্তি হয় ৷